December 23, 2024, 3:25 pm

অধ্যক্ষ! ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Sunday, December 13, 2020,
  • 124 Time View
Symbolic image

নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে চাকরি প্রার্থীদের কাছে থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। তবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কারণে সেটা পারেনি অধ্যক্ষ। নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি প্রার্থীকে টিকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ঘুষের আড়াই লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন অধ্যক্ষ।

আজ রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত তানজিম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটেছে এমন ঘটনা। অধ্যক্ষের কক্ষে বসে চাকরি প্রার্থীর লোকজনের কাছে ঘুষের সেই আড়াই লাখ টাকা তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহকারী। জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত তানজিম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৭টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. কামারুজ্জামান ভূঞা স্বাক্ষরিত নোটিশ বোর্ডে সাঁটানো নোটিশ সূত্রে দেখা গেছে, এতে প্রভাষক (হোমিওপ্যাথিক বিষয়সমূহ) পদে ৫ জন, প্রভাষক (এলাইড বিষয় সমূহ) পদে ৩ জন, প্রভাষক (প্রি-মেডিকেল বিষয়সমূহ) পদে ২ জন, মেডিকেল অফিসার পদে ২ জন, প্রধান সহকারী পদে ১ জন, দারোয়ান পদে ১ জন ও এমএলএসএস পদে ২ জনকে সিলেকশন কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে ওই নিয়োগ পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার কথা বলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. কামারুজ্জামান ভূঞার বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষায় টিকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে রবিবার এক চাকরি প্রার্থীর স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিয়েছেন অধ্যক্ষ।

চাকরি প্রার্থীর স্বজনরা শনিবার প্রতিষ্ঠানটিতে এসে হৈচৈ করলে রবিবার তাদেরকে কলেজে এসে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলেন অধ্যক্ষ কামারুজ্জামান। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে নাসিকের ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানসহ চাকরি প্রার্থীর স্বজনরা এলেও অধ্যক্ষ কামারুজ্জামান তার অফিসরুমে ছিলেন না।

প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ ঢাকায় হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে গিয়েছেন। তার কাছে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গেছেন। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে বসেই ঘুষের সেই আড়াই লাখ টাকা ফেরত দেন অফিস সহকারী কাজী নজরুল ইসলাম।

এর একটি ভিডিও ইতিমধ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসেছে যাতে দেখা গেছে অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম সেই ঘুষের টাকা গুণে চাকরি প্রার্থীর স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায় নজরুল ইসলাম বলছেন, টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অধ্যক্ষ তাকে এই আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গেছেন চাকরি প্রার্থীর স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিতে।

খরচের কথা বলে নেওয়া আরও ৭০ হাজার টাকা কবে ফেরত দিবে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, স্যারতো ঢাকায় গেছেন। তিনি আগামীকাল আসবেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলতে পারবেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায় কাজী নজরুল ইসলাম প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঘুষের সেই টাকা নেওয়া হয়েছিল বোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার জন্য।

 

নিয়োগ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকেও বোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজের জন্য ঘুষ প্রদান করতে হয় বলে নজরুল দাবি করেন। অন্যথায় নিয়োগ পেলেও তারা বেতন ভাতা পাবে না বলে নজরুল জানান। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের সঙ্গেও বোর্ডের কন্টাক্ট হয়েছে।

ঘুষ দেওয়ার পরেও চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ কেন হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের ইতিহাসে এই প্রথম নারায়ণগঞ্জে দৃষ্টান্তমূলক পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে এমন পরীক্ষা কোথাও হয়নি। দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক পরীক্ষা হলে উপস্থিত ছিলেন। প্রস্রাব করতেও যাননি। এডিএম সাহেবও ছিলেন।

নজরুল ইসলাম আরো বলেন, কে চাকরি পেল না পেল এটা আমি জানি না। অধ্যক্ষ সাহেব সকাল ১১টা পর্যন্ত অফিসে ছিলেন। পরে আমাকে টাকা দিয়ে গেছে আমি আপনাদের বুঝিয়ে দিলাম। চাকরি প্রার্থীর স্বজন বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের পরিচালক (জেনারেল) মো. আবুল বাশার বাসেত জানান, চাকরিতে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ।

 

কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় টিকিয়ে দিতে না পারায় অফিস সহকারীর মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন।

নাসিকের ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, প্রতারণার শিকার চাকরি প্রার্থী আমার এলাকার ব্যক্তি হওয়ায় আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের সঙ্গে এসেছিলাম। চাকরি দেওয়ার কথা বলে অধ্যক্ষ ৩ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে অফিস সহকারীর মাধ্যমে মাত্র আড়াই লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. কামারুজ্জামান ভূঞার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, তিনি কাউকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেননি। কাউকে কোন অর্থ ফেরতও দেননি। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71